ঢাকা , রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ , ১৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাদক ও অবৈধভাবে ফসলিজমি কাটা অসাধু ব্যক্তিদের সাথে সখ্যতার অভিযোগ প্রেমতলী আইসির বিরুদ্ধে

বিশেষ প্রতিনিধি
আপডেট সময় : ২০২৫-০৪-২৭ ০৩:০৮:২৭
মাদক ও অবৈধভাবে ফসলিজমি কাটা অসাধু ব্যক্তিদের সাথে সখ্যতার অভিযোগ প্রেমতলী আইসির বিরুদ্ধে মাদক ও অবৈধভাবে ফসলিজমি কাটা অসাধু ব্যক্তিদের সাথে সখ্যতার অভিযোগ প্রেমতলী আইসির বিরুদ্ধে
 

 

রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে মাদক ও অবৈধভাবে তিন ফসলি জমির মাটি বিক্রি সিন্ডিকেটের অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে গভীর সখ্যতা ও মাসোহারা নেওয়া অভিযোগ উঠেছে প্রেমতলী তদন্ত কেন্দ্রের আইসি মাকছুদের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, গোদাগাড়ী থানার কাকন হাট রোডের তিন কিলোমিটার ভেতরে জিয়োলমারি গ্রামে তিন ফসলি জমিতে ভেকু মেশিন দ্বারা মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি করছেন সুজন নামের এক ব্যক্তি। শুক্রবার সকাল থেকে শুরু করে শনিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত তিন ফসলি জমির মাটি ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর যোগে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়।

জানতে চাইলে সুজন জানায়, আইসি মাকছুদকে ম্যানেজ করে মাটি কাটছি। তিনি খুব ভাল মানুষ লেনদেন ঠিকমতো করলে ব্যবসা করতে কোন সমস্যা নাই। এছাড়া একই কায়দায় মাটি কেটে বিক্রি করছেন জুগনি ডাইং কলোনীর কাওসার ও বাবু। একই থানার প্রেমতলী তদন্ত কেন্দ্র নিকটবর্তী স্থানে গৌরঙ্গবাড়ী গ্রামে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন যুবলীগ নেতা বাদশা এবং
বিদিরপুর ইস্কনের সামনে একই কায়দায় মাটি কেটে বিক্রি করছেন রাকিবুল নামের এক ব্যাক্তি।

স্থানীয়রা বলছেন, একই স্থানে গত বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাত ১০টায় পুরানো পুকুর সংস্কারের দায়ে (সাবেক সেনা সদস্য) বাবু নামের এক ব্যক্তিকে ভ্রাম্যামান আদালত পরিচালনা করে লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন এসিল্যান্ড।

ভুক্তভোগী বাবু জানান, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে পুকুর সংস্কারের পারমিশন নেয়া ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারনে ওই স্থানে হাটু পরিমান কাঁদা হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৩৫দিন ট্রাক ও ভেকু মেশিন ঢুকিয়ে কাজ করতে পারিনি। বর্তমানে বেঁধে দেয়া সময় পার হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, যারা তিন ফসলি জমিতে অবৈধভাবে ভেকু মেশিন দ্বারা তিন ফসলি জমির মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি করছেন তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। তাই আমি পুকুর সংস্কার কাজ শুরু করি। গত (২০ এপ্রিল) রাতে প্রেমতলী তদন্ত কেন্দ্রের
আইসি মাকছুদ আমার ট্রাক আটকায় এবং কিছু অর্থ দাবি করেন। আমি তাকে ৫হাজার টাকা দিলে সে ক্ষুদ্ধ হন। ওই সময় পরিচিত এক ভাইকে দিয়ে তাকে ফোনে তদবির করায়। পরে তিনি ৫হাজার টাকা রেখে দেন এবং ট্রাক ছেড়ে দেন। আইসির চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট তদবির করেন তিনি। পরেরদিন ঘটনাস্থনে যান সার্কেল এসপি। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করিয়ে আমাকে আটক করে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এদিন আইসি মাকছুদ প্রকাশ্যে জামার কলার ঝাঁকিয়ে বলেন, আমার কাছে তদবির, আমি আইসি দেখিয়ে দিলাম।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রেমতলী তদন্ত কেন্দ্রের ১ কিলোমিটার মধ্যে সকাল থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত প্রকাশ্যে ভেকু মেশিন দ্বারা তিন ফসলি জমি কেটে ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাক যোগে মাটি নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়।

স্থানীয়দের দাবি, আইসির ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনায় সহযোগীতা করায় সাধুবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু অনেক গুলি স্থানে অবৈধভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। যাদের কোন প্রকার অফিসিয়াল অনুমোদন নাই। তারপরও প্রকাশ্যে দিবালোকে এই ধরনের চুরি হচ্ছে কিভাবে! এ বিষয়ে আইসি’র ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

স্থানীয়রা আরও বলেন, আমরা চাই তদন্ত কেন্দ্রের আইসি অবৈধ মাটিকাটা থেকে শুরু করে সকল মাদক স্পট বন্ধের জন্য সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করবেন।

এদিকে, গোদাগাড়ী থানার মাদাপুর, হরিণবিষ্টা, বিদিরপুর, পিরিচপুর, মহিষালবাড়ী, চাপাল, রাজাবাড়ী, নিমতলা, কালিদিঘী, গোপালপুর, বসন্তপর ও ফরাদপুর গ্রামে একাধীক মাদকের ঘাটি রয়েছে। এসব মাদক পল্লিতে হাত বাড়ালোই মেলে গাঁজা, ফেনসিডিল, মরণ নেশা ইয়াবা ও হেরোইন-সহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। প্রতিদিন ২৪ ঘন্টাই এইসব স্পটে পাওয়া যায়
মাদক।

একাধীক স্থানীয়রা জানায়, রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন প্রান্তে থেকে আসা এবং সংশ্লিষ্ট থানা ও তদন্তকেন্দ্রের এলাকা থেকে এসব স্থানে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, উঠতি বয়সি যুবক, তরুণরা গিয়ে সেবন করছে মাদক। মাদক সেবন থেকে বাদ পড়ছেনা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। আয় রোজগার নাই। কিন্তু সেবন করতে হবে মাদক। আর এই মাদকের টাকা যোগাড় করতে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সাথে অশান্তি, মারধর, অনেক সময় মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছেন মা-বাবা- সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। মাদক সেবনের টাকার যোগাড় করতে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, ব্লাকমেইল-সহ খুনের মতো জঘন্য ঘটনার সাথেও জড়িয়ে পড়ছে মাদকাসক্তদের বড় একটা অংশ।

এ ব্যপারে প্রেমতলী তদন্তকেন্দ্রের আইসি মাকছুদকে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, যে সকল স্থানে মাটি কাটা হচ্ছে, বন্ধের জন্য এসিল্যান্ড স্যারকে জানান। মাদক-সহ অবৈধ মাটি কাটা ও বিক্রির সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সব মিথ্যা।

সার্বিক বিষয়ে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি, মোঃ রুহুল আমিনকে জানানো হলে তিনি বলেন, আমার জানা নাই। তবে আমি দেখছি।

গোদাগাড়ী থানার সার্কেল এসপি’র নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওই স্থান দিয়ে যাচ্ছিলাম। অবৈধ মাটি কাটা দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে ছিলো। আমি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলাম। বর্তমানে যেসকল স্থানে অবৈধভাবে মাটি কাটা হচ্ছে, সেই গুলিও বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি। 

 

 

 


নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ